পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে ব্যাপক প্রস্তুতি: সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার: যুক্তরাষ্ট্রের অভিনন্দন

Bangla Radio 10 views
বাংলাদেশের গৌরব বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে আগামীকাল ২৫ জুন শনিবার। আগামীকাল সকাল ১০টায় বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার শিবচরের বাংলাবাজার ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ঘাটে প্রধানমন্ত্রী এক বিশাল জনসভায় যোগ দিয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ঘোষণা করবেন।

আজ শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়াঘাট এবং মাদারীপুরের শিবচরের ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরী (কাঁঠালবাড়ী) ঘাট পরিদর্শন এবং আগামীকাল প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন উপলক্ষে নৌযান ও ঘাটগুলোর প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ শেষে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বিভিন্ন জেলা   থেকে নৌপথে, সড়কপথে এই জনসভায় কয়েক  লাখ লোক অংশ নেবে। নৌপথে আসা মানুষের জন্য বাংলাবাজার ঘাটে অস্থায়ীভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে ১৫টি ঘাট।

শনিবার প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসএসএফ'র নির্দেশে সকাল থেকেই বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ, স্পিডবোটসহ সকল যাত্রীবাহী নৌ চলাচল বন্ধকরে দেওয়া হয়েছে।  যাত্রীদের বিকল্প নৌরুট ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এদিকে, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ শুক্রবার ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে এ অভিনন্দন জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ তৈরি করবে। সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, জনগণ এবং পণ্যকে দক্ষতার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য টেকসই পরিবহন কাঠামো তৈরি করবে। এটি বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি উদাহরণ।’

ওদিকে, আগামীকাল শনিবার স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে  পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করার কথা জানিয়েছেন  বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল পরিদর্শনে এসে আইজিপি এ মন্তব্য করেন, আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় আলোড়ন তুলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি অর্জন হয়েছে, এটি বিশ্বকে জানান দিচ্ছে এই অর্জনের মাধ্যমে। সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সারাদেশব্যাপী একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আগামীকাল আমরা প্রত্যাশা করছি এখানে কমপক্ষে ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে। তার বেশিও হতে পারে। এই অনুষ্ঠানটি সমগ্র দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক পর্যায় গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলে দুটি সর্বাধিক প্রযুক্তির ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। যা প্রথম বারের মত আমাদের দেশে ব্যবহার হচ্ছে। এই বড় ওয়াচ টাওয়ার দুটি সম্প্রতি আমেরিকা থেকে আনা হয়েছে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, সেতু মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা কমিটি এখানে কাজ করছে। আমরা সর্বশেষ নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। জনসভাস্থলে যাওয়া আসার পথ কেমন হবে গাড়ি পার্কিং কেমন হবে এসব বিষয় আমরা ট্রাফিক পরামর্শ দিয়েছি। এই নির্দেশনা ও বিধিনিষেধ মানলে সবার জন্য জনসভাস্থলে আসা খুবই সুবিধা হবে। এ ছাড়াও রাস্তায় সাইন পোস্টিং দেয়া আছে। যারা এখানে কখনো আসেনি তারাও খুব সহজে এই জনসভাস্থলে প্রবেশ করতে পারবেন।

এ ছাড়াও ঐতিহাসিক এই জনসভা ঘিরে প্রতিটি স্থানে নিরাপত্তার জন্য আলাদা সিকিউরিটি ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে জেলা পুলিশ, নৌপুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ আলাদাভাবে কাজ করছে। জনসভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানে থাকবে।

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, জনসভাস্থলে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে। আমরা সম্প্রতি দেখতে পেয়েছি, সারা দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে যারা জনসভাস্থলে আসবেন করোনার যে নিরাপত্তা ও বিধিনিষেধ রয়েছে সেগুলো সবাইকে মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতুটি দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের এলাকাগুলোকে ঢাকা ও অন্যান্য এলাকাগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করবে। পদ্মা সেতু চালু হলে তা দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াবে। সরবরাহ ব্যবস্থাতেও উন্নতি আসবে। এই সেতু চালু হলে তা দেশের পর্যটন খাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ এতে করে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা কিংবা সুন্দরবন ভ্রমণের সময় অনেকটা কমে আসবে। ধারণা করা হচ্ছে, সেতুটি দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি করবে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,  প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে ৭৫ হাজার যানবাহন পার হতে পারবে। এই সেতুর উপকারভোগী হবেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার তিন কোটি মানুষ। সেতুটি দিয়ে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

সেতু ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-

. পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা।

. পদ্মা সেতুর ওপর যেকোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ।

. তিন চাকা বিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, অটোরিকশা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়িযোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না।

. গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫.৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না।

. সেতুর ওপরে কোনো ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না।

সেতুটি নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব রক্ষার্থে ব্যবহারকারীদের জন্য এই নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।#

Add Comments