কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ (বুধবার) ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার জন্য তেহরান সফরে এসেছেন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কেনআনি বলেছেন, কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আল থানি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের সাথে দ্বিপক্ষীয় বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন।
এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত পরোক্ষ আলোচনায় ইরান পরমাণু সমঝোতা বা জেসিপিও'র বাইরে কোনো দাবি উত্থাপন করেনি। অথচ দোহায় পরোক্ষ আলোচনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ইরানের বাড়তি দাবির কারণেই আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। এ সময় তিনি আমেরিকার সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা আয়োজনে কাতারের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
আজকের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আল থানি বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে আলোচনা করতেই তিনি ইরান সফরে এসেছেন। তিনি ইরানের পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন এবং আঞ্চলিক সংলাপ ও সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে কাতারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এই দুটি মুসলিম দেশ পারস্য উপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর অঞ্চলে অবস্থিত এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তারা অভিন্ন নীতি পোষণ করে। গত কয়েক বছর আগে সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন ও আমিরাত কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলে ইরান কাতারের সরকার ও জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায় এবং দেশটির বিরুদ্ধে ওই চার দেশের অন্যায় নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ হয়ে যায়। এরপর থেকে কাতারের সঙ্গে ইরানের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি গত ২১ ফেব্রুয়ারি কাতার সফরে গেলে সেদেশে তিনি ব্যাপকভাবে সমাদৃত হন এবং দোহা সরকার তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের ওই সফরের কারণে দুদেশের মধ্যে আর্থ-রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, নিরাপত্তা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয়। এ ছাড়া বিমান উড্ডয়ন, জাহাজ চলাচল, বাণিজ্য, গণমাধ্যম, ভিসা ছাড়াই যাতায়াতের সুযোগ, বিদ্যুত, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ১৪টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর থেকে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে সহযোগিতা বিস্তারের লক্ষ্যে দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে সফর বিনিময় অব্যাহত রয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বর্তমান তেহরান সফরও এমন সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে গত ২৮ ও ২৯ জুন দোহায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ইরান ও আমেরিকার মধ্যে সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই বৈঠককে ইতিবাচক ও গঠনমূলক বলে অভিহিত করে দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের সাথে আলাদাভাবে আলোচনার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সংলাপকে সফল করার জন্য কাতার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হওয়ার বিষয়ে ইরান স্বদিচ্ছার প্রমাণ দিলেও মার্কিন কর্মকর্তারা এখন পরমাণু সমঝোতার বাইরে অন্য বাড়তি দাবি মেনে নিতে ইরানকে চাপ দিচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায় পরমাণু সমঝোতায় ফেরার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নুড প্রাইস গত মঙ্গলবার বলছেন, ইরানের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনার আর কোনো ইচ্ছা ওয়াশিংটনের নেই।
তারপরও কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংলাপকে এগিয়ে নেয়ার জন্য চেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি তেহরান সফরে এসেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তেহরানে তিনি ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা উচ্চ পরিষদের সচিব আলী শামখানির সাথে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে কথা রয়েছে। #