পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক যৌথ কমিশনের ১৮ তম বৈঠক গতকাল অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পরমাণু সমঝোতার শরীক অন্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা এ বৈঠকে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন।
পরমাণু সমঝোতার সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার পর ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত একতরফা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কারিগরি ও কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তাদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। এছাড়া এ বৈঠকে ইরান-বিরোধী নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া এবং পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তবায়নে কারিগরি বিষয় দেখভাল করার জন্য আলাদা দুটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়েছে। এ দু'টি টিম তাদের প্রচেষ্টার ফলাফল কমিশনে উত্থাপন করবে।
ভিয়েনা শহরে অপর একটি হোটেলে মার্কিন প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল তবে তারা পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক যৌথ কমিশনের বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেনি। কারণ ইরান আগেই জানিয়ে দিয়েছিল তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কিংবা বহুপক্ষীয় কোন আলোচনাতেই বসবে না। ভিয়েনা বৈঠক শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক দপ্তরের উপপ্রধান অ্যনরিকা মুরা এ বৈঠককে গঠনমূলক হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, বিরাজমান অচলাবস্থা দূর করার জন্য দুটি বিশেষজ্ঞ টিমের কার্যক্রমের ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছে।
এদিকে ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে নিযুক্ত প্রতিনিধি মিখাইল অলিয়ানভ এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, এ বৈঠকের সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে পরমাণু সমঝোতাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইসও ভিয়েনা বৈঠককে একধাপ অগ্রগতি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি এও বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবিত করতে হলে একমাত্র পথ হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় সংলাপে ফিরে আসা।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এতো আশাবাদ সত্ত্বেও পরমাণু সমঝোতায় ওয়াশিংটনের ফিরে আসার ব্যাপারে তেহরানের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। আর তা হচ্ছে ওয়াশিংটন যতদিন তেহরানের ন্যায্য দাবি পূরণ না করবে ততদিন পর্যন্ত পরমাণুর সমঝোতায় ফিরে আসার কোন সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের পরমাণু আলোচক এবং অন্যতম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি বলেছেন, পরমাণু সমঝোতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে মার্কিন সরকারকে অবশ্যই ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এরপর ইরানও ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ভাবে তুলে নেয়া হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরই কেবল পরমাণু সমঝোতায় দেয়া নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের ৮মে একতরফাভাবে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করে যাতে তেহরান ওয়াশিংটনের অন্যায় ও অবৈধ দাবির কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়। তবে ইরান এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাপ মোকাবেলা করে এসেছে এবং ট্রাম্প কোন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি। ইরান বিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত রবার্ট মলি তেহরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইরানের ব্যাপারে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি অনুসরণ করে চলেছেন। তিনি পরমাণু সমঝোতায় ওয়াশিংটনকে ফিরিয়ে আনার জন্য ইরানকে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছেন। তবে তেহরান বাইডেনের কোন শর্তই মানেনি এবং নিজের অবস্থানে অটল রয়েছে।#