বিএনপি ক্ষমতায় এলে কাকে সরকারপ্রধান করা হবে ? আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন প্রশ্ন রেখেছেন সাংবাদিকদের সামনে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি’র প্রসঙ্গ টেনে বলেন , ‘যে দলগুলো তৃণমূল থেকে উঠে আসেনি, সেই দলগুলোর কাছে কী আশা করেন? ওই দলের নেতৃত্ব কার হাতে? একজন অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। নির্বাহী ক্ষমতা বলে সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার সুযোগটা দিয়েছি বয়সের কথা বিবেচনা করে। আরেকজন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও পলাতক। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তবে কাকে সরকারপ্রধান করবে?
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি একেক সিটে দিনে তিনবার করে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। ঢাকা থেকে একজন ঠিক হয়। আবার লন্ডন থেকে আরেকজন। যে যত টাকা দিয়েছে, তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তারা মাঝখানে নির্বাচন ছেড়ে চলে গেল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন মাঝপথে কেউ নির্বাচন ছেড়ে চলে যায়, তখন তো মাঠ ফাঁকা। বাকিরা তখন যা খুশি, তা–ই করতে পারে। সেই দোষ তো আওয়ামী লীগের না। এখানে গণতন্ত্রের দোষ কোথায়?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো দল নির্বাচনে জয়ী হলে কে সরকারপ্রধান হবেন, সেটা আগেই বিবেচনা করা হয়। তারা যে নির্বাচন করবে, তাতে কাকে দেখাবে? সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে? সে তো দেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে কত টাকা খরচ করে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেল একটু খোঁজ করেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা আরো উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ প্রাচীন একটি দল। সাধারণ মানুষ এই দল গঠন করে। আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ মূল একটি দল আছে বিএনপি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরশাসক। তিনি খুনি মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলান। জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনি। তিনি আইয়ুব খানের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তিনি কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছেন। তাঁর হাতে তৈরি দল বিএনপি।
জাতীয় পার্টির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পার্টিও একইভাবে স্বৈরশাসকের হাতে তৈরি। তাদের তো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। আর আমাদের বাকি ছিল বাম দলগুলো। তারা তো ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র হতে হতে দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন। ভাঙতে ভাঙতে বাম থেকে ডানে কাত হয়, কখনো বামে কাত হয়। আছে কে? শক্তিশালী একটা দল করে দেন। মাঠে দেখা হবে।’
এ সময় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হবার পর ওই অঞ্চলে দেশি-দেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগের একটা বড় লিংক। তাই আঞ্চলিক বাণিজ্যে এই সেতুর ভূমিকা অপরিসীম। তা ছাড়া পদ্মার দু’পারে পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে।
শেখ হাসিনা জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষের শ্রমে আজ পদ্মা সেতু হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানিসহ আরও অনেক দেশ পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘এ জন্য আমি বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ তারা আমার পাশে ছিলেন। তাদের সহযোগিতার জন্য আজ পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো উল্লেখ করেন, দেশের অনেক অর্থনীতিবিদ ও জ্ঞানীগুণী পদ্মা সেতু হবে না বলে সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। যারা সমালোচনা করেছে তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব। সমালোচনাকারীদের আজ বলব, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসেন, আমরা আমন্ত্রণ জানালাম। পদ্মা সেতু ঘুরে দেখে যান।
পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্যক্তি-স্বার্থে কেউ দেশের এত বড় ক্ষতি করতে পারে তা আমার জানা ছিল না। ব্যাংকের এমডি পদের লোভে একজন ব্যক্তি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আটকে দেন। তার সঙ্গে আরও কিছু ব্যক্তি সহায়তা করেছেন। তাদের ষড়যন্ত্রে ও মিথ্যা তথ্যে বিশ্বব্যাংক একটা পর্যায়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে যায়।#