ইয়েমেনে সৌদি জোটের আগ্রাসন সম্পর্কে অত্যন্ত যৌক্তিক ও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন লেবাননের জনপ্রিয় ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর প্রধান সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ।
হিজবুল্লাহর প্রধান মনে করেন ইয়েমেন পরিস্থিতিকে সৌদি সরকার সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে।
আসলে সৌদি সরকার গোটা পশ্চিম এশিয়ার ঘটনাপ্রবাহকে শিয়া ও সুন্নি –এ দুই ভাগে ভাগ করে বিশ্লেষণ করে থাকে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া মুসলমানের নেতৃত্ব-কেন্দ্রীক রাষ্ট্র ও দলের ব্যাপারে অন্ধ বিদ্বেষের নীতি গ্রহণ করছে। তাই সৌদি সরকারের দৃষ্টিতে পূর্ব সৌদি আরব, বাহরাইন, ইয়েমেন ও নাইজেরিয়ার পরিস্থিতির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
২০১১ সালে ইয়েমেনের স্বৈরশাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহ'র বিরুদ্ধে সেখানকার জনপ্রিয় গণ-আন্দোলন যাতে সফল না হয় সে জন্য সৌদি সরকার তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। অবশেষে ২০১২ সালে ষড়যন্ত্রমূলক এক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রীড়নক মনসুর হাদিকে ইয়েমেনের ক্ষমতায় বসাতে সক্ষম হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে ইয়েমেনে আবারও গণ-বিক্ষোভ শুরু হলে ইয়েমেনি সংসদের অনাস্থার প্রেক্ষাপটে মনসুর হাদি পালিয়ে গিয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। এ অবস্থায় ইয়েমেনে শিয়া মুসলমানদের নেতৃত্বে জনপ্রিয় জাতীয় ঐক্য মোর্চার নতুন সরকার গঠনকে সহ্য করতে না পেরে সৌদি সরকার সেখানে আগ্রাসন শুরু করে। সৌদি সরকারের এই আগ্রাসনকে বৈধতা দিতে গিয়ে সৌদি ওয়াহাবি মুফতিরা ইয়েমেনের সংঘাতকে শিয়া-সুন্নির সংঘাত বলে উল্লেখ করেছে বলে হিজবুল্লাহ প্রধান স্মরণ করিয়ে দেন।
সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ'র মতে সৌদি সরকার ইয়েমেনের ওপর আগ্রাসন চাপিয়ে দিয়েছে মার্কিন-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে। মার্কিন-ইহুদিবাদী অক্ষই সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে পশ্চিম এশিয়ায় 'ডিভাইড এন্ড রুল' তথা 'ভাগ করে শাসন করা'র নীতি প্রয়োগের চেষ্টা করে আসছে। ইরান-আতঙ্ক ছড়ানোও এই নীতিরই অংশ। ইয়েমেনের জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ'র নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের আগ্রাসনও এই বিভেদ-নীতিরই অংশ। সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ বলেছেন, ইয়েমেনে আগ্রাসন চালানোর সঙ্গে শিয়া-সুন্নি মতপার্থক্যের কোনো সম্পর্ক নেই, বরং এটি মার্কিন সরকারের এ অঞ্চল সংক্রান্ত নানা লক্ষ্য ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। মার্কিন-ইহুদিবাদী জোটের হাতে সর্বশেষ যে অস্ত্র বাকি রয়েছে তা হল এ অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্টি করা। সম্প্রতি আনসারুল্লাহর প্রধানও এ বিষয়টি তার বক্তব্যে তুলে ধরেছেন।
ইয়েমেনে আগ্রাসন চালাতে গিয়ে ইয়েমেনিদের ব্যাপক প্রতিরোধের কারণে বিপর্যয়ের শিকার সৌদি জোট এখন যুদ্ধ বিরতির যে প্রস্তাব দিচ্ছে সেটা যে আসলে বড় ধরনের প্রতারণা এবং ইয়েমেনিদেরকেই যুদ্ধবাজ হিসেবে তুলে ধরার প্রচার-যুদ্ধের অংশ হিজবুল্লাহ প্রধান তাও স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। সৌদি সরকার ইয়েমেনের ওপর নৌ, স্থল ও আকাশ অবরোধসহ সর্বাত্মক অবরোধ তুলে নেয়ার পদক্ষেপ নেয়নি। তাই সঙ্গত কারণেই ইয়েমেন যুদ্ধ বিরতির এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। অবরোধের মধ্যে যুদ্ধ-বিরতির আলোচনাও হতে পারে না বলে হিজবুল্লাহ প্রধান সতর্ক করে দেন। #