লেবাননের ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এক ভাষণে বলেছেন, তার দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির পেছনে সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকারের হাত রয়েছে। লেবাননে গত বেশ কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে তীব্র সংকট চলছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, এসব সংকট লেবাননের মতো একটি ক্ষুদ্র দেশের জন্য অনেক বড় সমস্যা। লেবাননে নানাবিধ সংকটের পেছনে বহু কারণ রয়েছে এবং এর পেছনে বহু কুচক্রি মহলের কারসাজি রয়েছে। তবে হিজবুল্লাহ মহাসচিব নাসরুল্লাহসহ দেশটির অভ্যন্তরীণ ও বাইরের বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, লেবাননে এই ভয়ানক পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী। নাসরুল্লাহ তার দেশে সংকট সৃষ্টিতে মার্কিন ভূমিকার কথা জানিয়ে চারটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, বৈরুতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস লেবাননের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। হিজবুল্লাহর ক্রমবর্ধমান শক্তি ও জনপ্রিয়তা এবং ইসরাইলের সঙ্গে দেশটির সীমান্ত থাকায় লেবাননের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। আগ্রহের মাত্রা এতোটাই বেশী যে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের পর লেবাননে তাদের সবচেয়ে বড় দূতাবাস গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
লেবাননের খ্যাতনামা রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমিন খাতিত মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই ইচ্ছা বা প্রচেষ্টার লক্ষ্য যতটা না রাজনৈতিক তারচেয়ে বেশি নিরাপত্তাগত। বৈরুতের কঠোর নিরাপত্তা এলাকায় মার্কিন দূতাবাস নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে যাতে সেখান থেকে ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য তারা আরো সেবা দিতে পারে। এ কারণে হিজবুল্লাহ মহাসচিব নাসরুল্লাহ গতরাতে তার ভাষণে বলেছেন, ‘বৈরুতে অবস্থিতি মার্কিন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও অন্য কর্মকর্তারাই লেবানন পরিচালনার প্রতিটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করছে, নীতি নির্ধারণ করে দিচ্ছে। এমনকি হিজবুল্লাহ ইরান থেকে যে জ্বালানি তেল কিনেছে সেখানেও হস্তক্ষেপ করে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে মার্কিন দূতাবাস। এভাবে তারা প্রতিটি বিষয়ে নাগ গলাচ্ছে’।
লেবাননের বিরুদ্ধে বৈরুতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের ষড়যন্ত্রের দ্বিতীয় দিক হচ্ছে, এই দূতাবাস লেবাননের মাটিতে বসে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ শক্তি হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সবচেয়ে বড় ঘাটিতে পরিণত হয়েছে। অন্য কথায় বলা যায়, মার্কিন দূতাবাস তাদের অনুগতদের সহযোগিতায় হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ ব্যাপারে নাসরুল্লাহ বলেছেন, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছে তা বৈরুতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
লেবাননের বিরুদ্ধে বৈরুতে অবস্থিত মার্কিন দূাতবাসের ষড়যন্ত্রের তৃতীয় দিক হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি জর্দান থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য লেবাননকে প্রস্তাব দিয়েছে। হিজবুল্লাহ নেতা নাসরুল্লাহ ইরান থেকে তেল কেনার উদ্যোগ গ্রহণের পরপরই মার্কিন দূতাবাস ওই প্রস্তাব দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইরানের কাছ থেকে তেল কেনার পদক্ষেপ বানচাল করে দেয়া এবং ইরান ও হিজবুল্লাহ বিরোধী প্রচার প্রপাগান্ড জোরদার করা। যুক্তরাষ্ট্র এমন সময় জর্দান থেকে বিদ্যুত কেনার প্রস্তাব দিয়েছে যখন নাসরুল্লাহ এ ব্যাপারে বলেছেন, লেবাননের জনগণ খুব ভালো করেই জানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের জন্য অন্তত ৬ থেকে ১২ মাস সময় লাগবে। এ ব্যাপারে সিরিয়াও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। কেননা জর্দান থেকে লেবাননে যে গ্যাস যাবে তা সিরিয়ার উপর দিয়েই যাবে। আর সেই ক্ষেত্রে সিরিয়ারও কিছু শর্ত রয়েছে।
লেবাননের বিরুদ্ধে বৈরুতে অবস্থিত মার্কিন দূাতবাসের ষড়যন্ত্রের চতুর্থ দিক হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র লেবাননের এই দুর্যোগে কোনো সহযোগিতা তো করছে না এমনকি অন্য দেশও যাতে সহযোগিতা করতে এগিয়ে না আসে সেই চেষ্টা করছে। মোটকথা, যুক্তরাষ্ট্র লেবাননকে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে এবং দেশটি যাতে আরো সংকটে জর্জরিত হয় সেই চেষ্টা করছে। হিজবুল্লাহ নেতা নাসরুল্লাহ এ কারণেই তার ভাষণে মার্কিন ষড়যন্ত্রের নানা দিক জনগণের সামনে তুলে ধরছেন যাতে সবাই প্রকৃত বিষয়টি বুঝতে পারে। #