মজলুম ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ.)'র শাহাদাতবার্ষিকী

Bangla Radio 36 views
জিলক্বদ মাসের শেষ দিন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক মজলুম ইমাম হযরত জাওয়াদ (আ)'র শাহাদত বার্ষিকী। ২৩০ হিজরির এই দিনে তিনি শাহাদত বরণ করেছিলেন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম মুহাম্মাদ বিন আলী আল জাওয়াদ-এ'র জন্ম হয়েছিল ১৯৫ হিজরিতে মদীনায়।

তার মায়ের নাম ছিল সাবিকাহ বা খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন হযরত মারিয়া কিবতির (আ) বংশধর।  পিতা  ইমাম রেজা (আ.)'র শাহাদতের পর মাত্র ৮ বছর বয়সে ইমামতের দায়িত্ব পান ইমাম জাওয়াদ।  ১৭ বছর এই পদে দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। মজলুম ও দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি 'জাওয়াদ' উপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি।
আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (আ.)ও ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান ও পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা ও সংস্কৃতির  পুনরুজ্জীবন এবং  বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু।  সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানী-গুণীরা ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (আ) সম্পর্কে বলেছেন, "মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (আ.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরত তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি ও সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে-ই তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।"
মালিকি মাজহাবের বিশিষ্ট ফকীহ ইবনে সাব্বাগ ইমাম জাওয়াদ (আ) এর জীবন-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লিখেছেন: কী বলবো! সবার চেয়ে কম বয়স অথচ তাঁর মান-মর্যাদা ছিলো সবার উপরে। ... তাঁর জ্ঞান, তাঁর প্রজ্ঞা, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সংক্রান্ত বহু মূল্যবান অবদান এখনো অবশিষ্ট রয়েছে। তিনি শত্রু পক্ষের বক্তব্যকে অকাট্য যুক্তি দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ও মিষ্টি ভাষায় খণ্ডন করে নিজস্ব বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সে সময়কার যতো তর্কবাগীশ আর আলঙ্কারিক ভাষাবিদ ছিলেন সবাইকে তিনি হার মানিয়েছেন। অথচ তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী। 
রাজা-বাদশাহদের জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে  আহলে বাইতের ইমামদের সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত ইসলাম ও এর শিক্ষাকে রক্ষা করা। আব্বাসীয় শাসক মামুন ও মুতাসিম ছিল ইমাম জাওয়াদ (আ.)'র যুগের দুই বাদশাহ। ইমাম পবিত্র মদিনা ছাড়াও হজের  সময় মক্কায় গমন উপলক্ষে সেখানে ইসলামের ব্যাখ্যা তুলে ধরতেন এবং বক্তব্যের পাশাপাশি নিজ আচার-আচরণের মাধ্যমে দিক-নির্দেশনা দিতেন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে। শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধেও থাকতেন সোচ্চার। এইসব শাসক বিশ্বনবী (সা.)'র আদর্শ ও সুন্নাতকে ত্যাগ করেছিল। ইমাম জাওয়াদ (আ.) শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসরদের প্রতিপালিত চিন্তাগত হামলা মোকাবেলা করে আহলে বাইত (আ.)'র আদর্শকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছিলেন।

Add Comments