আফগানিস্তানসহ মধ্যএশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন সমস্যা সমাধান এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য মধ্যএশিয়ার দেশগুলোর উপস্থিতিতে মস্কো-তেহরান যৌথ সহযোগিতার ক্ষেত্রে নয়া অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
ইসলামি ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসমন্বয়কারী এবং রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত সপ্তম আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ও সামরিক প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীতে ইরানের প্রতিনিধি দলের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ শাবানিয়ান বলেছেন, রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা ও সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার আওতায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা বিস্তারে তার দেশের সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এ কথা উল্লেখ করে ইরানের এ কর্মকর্তা আরো বলেছেন, মধ্যএশিয়ার দেশগুলোর অংশগ্রহণে তেহরান-মস্কো সহযোগিতা সমগ্র এ অঞ্চলের সমস্যার সমাধান এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে।
ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসমন্বয়কারী এমন সময় এ বক্তব্য দিলেন যখন পারস্য উপসাগরে চলতি বছর শেষের দিকে আগামী বছরের প্রথম দিকে ইরান, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে যৌথ নৌ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে বলে ইরান ও রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, ওমান সাগর ও পারস্য উপসাগর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে এবং হুমকি মোকাবেলায় ইরান সরকার ওই অঞ্চলে নিজের প্রতিরক্ষা শক্তি বহুগুণে বাড়িয়েছে। এ লক্ষ্যে ইরান বিভিন্ন সময়ে অন্য দেশের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ারও আয়োজন করেছে।
যাইহোক, রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা বিস্তার দুদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এতে করে আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে সামরিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে উঠবে। দুই বছর আগে ইরান, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে অনুষ্ঠিত যৌথ নৌ মহড়া থেকে বোঝা গেছে যৌথ নিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় আঞ্চলিক দেশগুলোর অংশগ্রহণে সহযোগিতার বিস্তার ঘটাতে চায় ইরান। ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলী ইসমাইলি আরদাকানি আঞ্চলিক সহযোগিতা বিস্তারের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, ইরান ও রাশিয়া মনে করে পরস্পরের সহযোগিতার মাধ্যমে বিশেষ করে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা বিস্তারের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের অশুভ উদ্দেশ্য তারা ব্যর্থ করে দিতে পারবে। এমনকি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়াদিতেও মার্কিন স্বেচ্ছাচারী আচরণে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে তেহরান ও মস্কো।
দ্বিতীয়ত, পশ্চিম এশিয়ায় ভূকৌশলগত দিক থেকে ইরান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। ইরানের এ সুবিধাজনক অবস্থান এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। তাই চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কৌশলগত সহযোগিতার বিস্তার খুবই জরুরি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে টেলিফোনালাপে রাশিয়া ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিস্তারকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে বলেছেন, তেহরানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিস্তারের লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক চুক্তিকে মস্কো স্বাগত জানাবে।
মোটকথা, ইরান রাশিয়ার সহযোগিতা আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে অসামান্য অবদান রাখবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।#