ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে তৈরি করা তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি আজ (শুক্রবার) জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেন।
কেন্দ্রীয় কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কৃষকরা বিভিন্ন রাজ্যে একনাগাড়ে ধর্না-অবস্থান ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষণার পরে এবার কৃষক আন্দোলন শেষ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কৃষক আন্দোলনের চাপে ও কয়েকটি রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দলের খারাপ ফলের আশঙ্কায় বিতর্কিত ওই আইন প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পরে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধি কেন্দ্রীয় সরকারকে টার্গেট করে বলেছেন, ‘দেশের অন্নদাতাদের সত্যাগ্রহ অহঙ্কারের মাথা নত করে দিয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে জয়কে অভিনন্দন।’
কংগ্রেসের মহাসচিব প্রিয়াঙ্কা গান্ধি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টার্গেট করে বলেছেন, ‘৬ শতাধিক কৃষক শহীদ, ৩৫০ দিনের বেশি সংগ্রাম, আপনার মন্ত্রীর ছেলে কৃষকদের পিষে মেরেছে, আপনি পরোয়া করেননি। আপনার দলের নেতারা কৃষকদের অপমান করে সন্ত্রাসী, দেশদ্রোহী, গুন্ডা, দুর্বৃত্ত বলেছেন, আপনি নিজেই আন্দোলনজীবি বলেছেন। তাদের উপরে লাঠিচার্জ করা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়।’
প্রিয়ঙ্কা গান্ধি আরও বলেন, ‘এখন আপনি নির্বাচনে পরাজয় দেখতে শুরু করেছেন, তারপর হঠাৎ আপনি এ দেশের সত্য বুঝতে শুরু করেছেন - এই দেশ কৃষকের দ্বারা তৈরি, এই দেশ কৃষকের, কৃষকই এই দেশের প্রকৃত তত্ত্বাবধায়ক এবং কোনও সরকার এ দেশের কৃষকদের স্বার্থকে চূর্ণ করে দেশ চালাতে পারে না। আপনার উদ্দেশ্য এবং আপনার পরিবর্তনশীল মনোভাব বিশ্বাস করা কঠিন। কৃষক সবসময় জয়ী হবে। জয় জওয়ান, জয় কিষাণ, জয় ভারত।’
ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের জাতীয় মুখপাত্র রাকেশ টিকায়েত বলেছেন, আন্দোলন এখনই প্রত্যাহার করা হবে না, আমরা সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করব যেদিন সংসদে কৃষি আইন বাতিল করা হবে। ‘এমএসপি’র পাশাপাশি সরকারের উচিত কৃষকদের অন্যান্য সমস্যা নিয়েও আলোচনা করা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বার্তায় বলেছেন, ‘প্রত্যেক সংগ্রামী কৃষককে আমার অভিনন্দন। এই আন্দোলনকারী কৃষকরা তাঁদের প্রতি হওয়া কোনও নিষ্ঠুরতাতেই দমেননি, এটা আপনাদের জয়, এই লড়াইয়ে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের জন্য রইল গভীর সমবেদনা।’
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন এমপি বলেছেন, ঔদ্ধত্যের পরাজয়। গর্বের চূড়া থেকে হাঁটু ভেঙে বসা।
সমাজকর্মী অরুন্ধতি রায় বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির উচিত কৃষকদের কাছে তাদের দুর্দশায় ফেলার জন্য, তাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর জন্য, বিজেপি নেতাদের তাদের খালিস্তানি বলার জন্য ক্ষমা চাওয়া। বিজেপি’র উচিত ভারতের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া!
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির সিনিয়র নেতা অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, কৃষি আইন নিয়ে এই ঘোষণা রাষ্ট্রনায়কোচিত। ঘোষণাকে স্বাগত। #